সুন্দর ত্বকের রহস্য
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে যুগ যুগ ধরে নানাভাবে চন্দনের ব্যবহৃত হয়ে আসছে গৃহস্থ বাড়িতে। এই আর্টিকেল-টায় চন্দন দিয়ে বানানো যেসব ফেস প্যাক-এর বিষয়ে আজ আলোচনা করবো সেগুলো ব্যবহার করলে যে ত্বক উজ্জ্বল হবেই সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিয়ের সময় নববধুর ত্বকের সৌন্দর্য দেখে আপনাদের মধ্যে অনেকেই বেশ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। কিন্তু এটা খেয়াল করেন না, বহুবার পার্লারে যাওয়ার কারণেই নব বধুরা এত সুন্দর হয়ে ওঠেন। মজার বিষয় হল প্রতিদিন যদি চন্দন প্যাক ব্যবহার করা যায় তাহলে কিন্তু আপনারও ত্বক নব বধুর মতো সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।
বাড়িতে বানানো চন্দন প্যাক লাগানোর আরও উপকারিতা আছে। কী সেই উপকারিতা? এতে কোনও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না, ফলে ত্বক খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। তাছাড়া আপনারা দৈনন্দিন যেসব বাজার চলতি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন তাতে একটু নজর ফিরিয়ে দেখুন, অনেক কিছুতেই চন্দনের উপস্থিতি পাবেন। তাহলে বাজার থেকে এইসব প্রডাক্ট না কিনে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন না ত্বক ভালো রাখার ম্যাজিক প্যাক! প্রসঙ্গত, চন্দন শুধু ফর্সা হতেই সাহায্য করে না, সেই সঙ্গে ত্বকের টেক্সচারের উন্নতি ঘটাতে এবং ত্বকের নানা আঘাত কমাতেও সাহায্য করে। তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক কেমন ধরনের চন্দন ফেস প্যাক ব্যবহার করলে নব বধুর মতো সৌন্দর্য পেতে পারেন আপনিও।
১. চন্দন এবং হলুদ: আপনি যদি কম দিনে আপনার ত্বককে উজ্জ্বল বানাতে চান তাহলে অবশ্যই ব্যবহার করুন এই ফেস প্যাক-টি। চন্দন এবং হলুদ, হয় দই অথবা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন একটা পেস্ট। তারপর লাগিয়ে ফেলুন মুখে। ব্যস, তাহলেই দেখবেন আপনার ত্বক হয়ে উঠছে উজ্জ্বল।
২. চন্দন আর নিম: নিম পাউডারের সঙ্গে চন্দন পাউডার এবং জল মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন পেস্ট। তারপর ধীরে ধীরে লাগান মুখে। আপনার যদি ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে তা কমাতে এই প্যাক-টি ম্যাজিক-এর মতো কাজ করবে।
৩. চন্দন আর গোলাপ জল: ত্বককে আদ্র রাখতে এই প্যাক-টি দারুণ কাজে দেয়। কীভাবে বানাবেন এই প্যাক? খুব সহজ! চন্দন পাউডারে সামান্য গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে মুখে লাগান। তাহলেই দেখবেন ত্বক কেমন সুন্দর হতে শুরু করেছে।
৪. চন্দন এবং বেসন: মুখ থেকে খুব চামড়া উঠছে? চিন্তা নেই! বেসনের সঙ্গে চন্দন পাইডার মিলিয়ে জল অথবা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলুন। তারপর সেই প্যাক মুখে লাগান। ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফলুন। আর নিজের উজ্জ্বল ত্বককে স্বাগত জানাতে তৈরি হয়ে যান। প্রসঙ্গত, যাদের খুব তৈলাক্ত ত্বক তারা দুধের পরিবর্তে জলের সঙ্গে বেসন আর চন্দন পাউডার মেলাবেন। ড্রাই স্কিন যাদের, তারাই একমাত্র দুধ ব্যবহার করবেন।
৫. চন্দন আর দুধ: দুধের সঙ্গে সামান্য চন্দন পাউডার মিশিয়ে মানিয়ে ফেলুন একটা পেস্ট। এবার সেই পেস্ট ধীরে ধীরে লাগান আপনার মুখে। যতক্ষণ না পেস্ট-টা একেবারে শুকিয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ রেখে দিন। একবার শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। প্রসঙ্গত, এই প্যাক-টি ত্বককে উজ্জ্বল করতে করে।
৬. চন্দন ও অ্যালোভেরা: এক চামচ চন্দন পাউডারের সঙ্গে সামান্য অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে বানিয়ে ফেলুন এই পেস্ট-টি। এরপর তা লাগিয়ে ফেলুন মুখে। এই প্যাক-টি মুখের দাগ এবং পোড়াভাব কমাতে সাহায্য করে।
৭. চন্দন, নারকেল তেল ও আমন্ড তেল: ১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ নারকেল তেল, ১/৪ চা চামচ আমন্ড তেল ও সামান্য গোলাপ জল মিশেয়ে প্যাক-টি বানিয়ে নিন। এরপর গলায়-মুখে প্যাক-টি লাগিয়ে রাখুন ২০ মিঃ এবং এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করে ময়েশ্চার ফিরিয়ে আনে এই প্যাক।
৮. চন্দন, টমেটো রস ও মুলতানি মাটি: ১/২ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ টমেটো রস, ১/২ চা চামচ মুলতানি মাটি ও সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক-টি মুখে-গলায় লাগিয়ে ১৫ মিঃ রেখে শুকিয়ে যাওয়ার পর বরফ পানিতে তুলো ভিজিয়ে নিয়ে মুছে মুখ-গলা পরিষ্কার করুন। মুখের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা পরিষ্কার করতে এই প্যাক খুব কার্যকরী।
৯. চন্দন ও কমলার ছাল: ১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো, ১ চা চামচ কমলার ছালের পেস্ট ও ১/২ চা চামচ গোলাপজল একত্রে মিশিয়ে প্যাক-টি বানান। মুখে-গলায় মেখে ২০ মিঃ পর ধুয়ে ফেলুন। স্কিন-এর গ্লো বাড়াতে এই প্যাক-টি সাহায্য করে।
এই প্যাক-গুলো ব্যবহার করে সুন্দর ত্বক পাবেন এটা বলতে পারি। তবে যদি সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ব্যবহার করেন তবে ভালো ফল পাবেন। একবার ব্যবহার করেই যদি ফল আশা করেন, তবে সেটা নিতান্তই অবান্তর বলা ছাড়া আর কোন উপায় দেখি না। আবার শুধু চন্দনের গুঁড়ো বা চন্দন কাথ ঘষে রসটাও মুখে মেখে দেখতে পারেন। ত্বককে দারুণভাবে সুন্দর করে তুলে। কীভাবে বলছি? পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স-রে ভাই!!

